প্রিয় সকাল,
শুভ্র ভোরের মিষ্টি আবেশ গায়ে মেখে খোলা বারান্দায় বসেছি তোমাকে চিঠি
লিখতে। এই সময়ে মনের ভাব বিনিময়ের প্রধান আকর্ষণ মুঠোফোন আর কি-বোর্ডের বাটনগুলোকে ছুটি দিয়ে কাগজ-কলমের শরণাপন্ন
হলাম। আমি আছি বারান্দায়/ বসে একা নিরালায়/ পথ চেয়ে তোমার অপেক্ষায়/ পাখিগুলো নেচে
নেচে/ আমায় যেন ডেকে যায়।
আজকের সকালটি আমার জীবনে অন্য রকম এক ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে ভরা। ব্যালকনিতে
রাখা নয়নতারার পাপড়িতে চুপটি করে বসে থাকা শিশিরে সিক্ত সকাল তুমি। হালকা ঝিরঝির বাতাস
যখন বাসরলতাগুলোকে কাঁপিয়ে দিয়ে যায় তখন আমার খুব ইচ্ছে করে ওই বাতাসে তোমার অবাধ্য
চুলের উড়াউড়ি দেখতে। তুমি কি জানো, যখন তোমার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যায় তখন তোমাকে দেখতে
প্রবীণ বটবৃক্ষের মতো লাগে। দুটো শালিক উড়ে এসে আমার খোলা বারান্দায় বসল। বুঝলাম, দুটি
মনের মিল ছিল বলেই আজ আমাদের দু’জনার দু’টি মনের উঠোন এক হয়ে গেছে। সকালের প্রথম রোদে
নিজেকে রাঙিয়ে নিলাম শুদ্ধ ভালোবাসার আলোয়। ঠিক এই মুহূর্তে আমি যেন আমার ভেতর কেমন
পরিবর্তন দেখতে পাই। ইচ্ছে করে চিৎকার করে সমস্ত পৃথিবীকে জানিয়ে দেই- আমি সকালকে ভালবাসি।
কাউকে ভালোবাসলে তার উপর অধিকারবোধ এমনিতেই জন্মে যায়। সেই অধিকার-বলে দাবি করতে পারি-
সকাল, তুমি শুধু আমার। শুধুই আমার। একটা সময় ভাবতাম ভালোবাসা বুঝি দেখে-শুনে, বেছে,
খুঁজে, মিলিয়ে তারপর হয়। কিন্তু না, ভালোবাসা হয় আচমকা, নীরবে, নিভৃতে, নিঃশব্দে। ভালোবাসার
জন্ম হয় ভালোলাগা বা মুগ্ধতার ওপর ভিত্তি করে। যতক্ষণ ভালোবাসা প্রকাশ না পাবে ততক্ষণ
তা মনকে পোড়াতেই থাকবে।
পোড়াতে পোড়াতে চৌচির চিতা নদী
চন্দনবনে অগ্নির মতো জ্বলে,
ভূকম্পনের শিখরে তোমার মুখ
হঠাৎ স্মৃতির পরশনে গেছে গলে।
(নির্মলেন্দু গুণ)
এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না
ছিলে না আকাশে, নদী জলে ঘাসে
ছিলে না পাথরে ঝর্ণার পাশে।
সকাল শিশিরকে ভালোবাসে, শিশিরও সকালকে ভালোবাসে। তাই তো শিশির মধ্যরাতের পর থেকে ভোর হওয়া অবধি অপেক্ষা করতে থাকে সকালের দেখা পাবে বলে। সবুজ ঘাসের বুকে শিশিরের সাথে আলাপ করতে সকাল যে আসবেই।
সেদিনের কথা খুব মনে পড়ছে এখন। শেষ বিকেলের ট্রেনে যখন বাড়ি ফিরব; সেই
বিদায় বেলায় আমার কেন যেন চোখ ফেটে কান্না আসছিল তখন তুমি কাছে এসে আমার হাতটি ধরে
বললে-
তুমি অমন ক’রে গো বারে বারে জল-ছলছল চোখে চেয়ো না,
জল-ছল-ছল চোখে চেয়ো না।
ঐ কাতর কণ্ঠে থেকে থেকে শুধু বিদায়ের গান গেয়ো না,
শুধু বিদায়ের গান গেয়ো না।
(কাজী নজরুল ইসলাম)
বাড়ি ফিরলাম বিরহ-ভরা অনুভূতিতে, মন ছিল শান্ত, স্থির। তোমার বলা কবিতাটা
বারবার মনকে আন্দোলিত করছিল। নানা স্মৃতি নানা রঙে নানা সুরে গান গেয়ে জানান দেয় তোমার
কথা। তাই তো সবুজাভ খামে ভরে ভালোবাসার আমন্ত্রণে প্রেমের রঙিন চিঠি দিলাম আমার সকালের
ঠিকানায়।
সবশেষে রইল বাকি একটি কথা-
আমি কেবল আমি কেবল
আমি কেবল দেখি,
ভালোবাসার দেয়াল জুড়ে
একটি প্রজাপতি সে তুমি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন